বর্তমান পরিস্থতি, যেটি নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার কিছু নেই, প্রায় সকলের উপরেই বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব ফেলছে। এবং এক একজন এক এক উপায়ে এই পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। কেও কেও হয়তো একটু ভালভাবে মোকাবিলা করতে পারছে আবার কেও কেও একটু কম পারছে হয়তো। আবার কেও হয়তো একদিন ভালভাবে কাটাচ্ছেন, আবার পরদিন একই ভাবে কাটাতে পারছেন না। এভাবে করেই দিন গুলো পার হচ্ছে সবার। কেও কেও নতুন রুটিন এর সাথে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন বিভিন্ন ভাবে ভালো থাকার। বিভিন্ন ধরণের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রকম কাজ করে মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতা মোকাবিলা করার কথা বলছেন। যেমন –

  • দৈনিক রুটিন মেনে চলা,
  • নিয়মিত খাওয়া, ঘুম ও শারীরিক ব্যায়াম,
  • ধর্মীয় অনুশীলন গুলো চর্চা অথবা ইয়োগা বা মেডিটেশন করা,
  • ভালো লাগার কাজ গুলো করা,
  • আপনজনদের সাথে যোগাযোগ করা,
  • ঘড়ের কাজে সাহায্য করা,
  • জমে থাকা কাজ গুলো শেষ করা ইত্যাদি উপায়ে ভালো ভাবে সময় কাটানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সবার জন্যে সব গুলো করা হয়তো সম্ভব না আবার সবার জন্যে সব গুলো কাজেও দিচ্ছে না হয়তো। সব রকম ভাবে চেষ্টা করার পরেও খুবই স্বাভাবিক যে আমরা বর্তমান বাস্তবতা এড়িয়ে থাকতে পারছি না। আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত সংবাদ আসছে কোন জায়গায় কত জন নতুন আক্রান্ত হচ্ছে বা মৃত্যু হচ্ছে। এই সংবাদ গুলো অবশ্যই যে কাওকেই কষ্ট দেয় এবং চিন্তাগ্রস্থ করে তোলে। আবার সব রকম স্বাস্থ্যকর নিয়ম মেনে চলা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত এক প্রকার আতঙ্ক আমাদের সবার মধ্যেই বিরাজ করছে যে কখন আমি বা আমার আপনজন কেও আক্রান্ত হয় কিনা!

এইরকম উদ্বিগ্ন পরিস্থিতিতে “আতঙ্কিত হবেন না” বলাটাও খুব একটা বাস্তব না। এই সময় মানুষ ভয় পাবে, আতঙ্কিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে দীর্ঘদিন প্রচণ্ড উদ্বেগ এর মধ্য দিয়ে যেতে থাকলে আমাদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় যেটি আমাদের মস্তিষ্কসহ শারীরিক সাস্থের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং আমাদের কে এই ভয়, উদ্বিগ্নতা, আতঙ্ক, হতাশা ইত্যাদি আবেগ গুলো কেও প্রাধান্য দিতে হবে।  যেহেতু ভয় পেয়ে বা দুশ্চিন্তা করে আমরা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পারবো না এবং যেহেতু এই মুহূর্তে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, আমরা উপরে উল্লেখিত কাজ গুলোর পাশাপাশি পরিস্থিতি টি সম্পর্কে আমাদের চিন্তা ভাবনা বা দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন এর মাধ্যমে নিজেকে ভালো রাখতে পারি।

বিখ্যাত মনবৈজ্ঞানিক একটি মডেল – Five-Part Generic Cognitive Model (Padesky and Mooney, 1990) – অনুযায়ী আমাদের কোন পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মনে বিভিন্ন ধরণের আবেগ তৈরি করে এবং সেই আবেগ দ্বারা চালিত হয়েই আমরা আচরণ করে থাকি। খুব সহজ ভাবে বললে আমরা নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে থাকলে মনে নেতিবাচক আবেগ তৈরি হয় এবং তখন আমরা কোন আচরণ করলে আমাদের লাভ হবে তা ভাবতে পারি না এবং ফলপ্রসূ আচরণ করতে পারি না।

আবার আমরা ইতিবাচক এবং যৌক্তিক ভাবে চিন্তা করলে আমাদের মনেও ইতিবাচক অনুভুতির সৃষ্টি হয় এবং  আমরা নিজেদের জন্যে উপকারী আচরণ করতে পারি।  নিম্নে বর্তমান সময়ে প্রচলিত কিছু চিন্তা ভাবনা তুলে ধরা হল যেগুলো চাইলেই আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক করতে পারি এবং এই  ইতিবাচক চিন্তা ভাবনাগুলো আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

আমি বাসায় বন্দি আছি → আমি বাসায় নিরাপদ আছি এবং সময় টাকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগাতে পারি।

এভাবে ভাবলে আমাদের মনে ভালো অনুভুতির সৃষ্টি হয় এবং মন ভালো থাকলে আমরা ফলপ্রসূ কাজ করতে পারি অথবা যেকোনো কাজ ই ভালভাবে সম্পন্ন করতে পারি।

আমি বা পরিবার এর কেও অসুস্থ হয়ে পরবো → আমরা নিজেদের কে সুস্থ রাখার জন্যে, আক্রান্ত হওয়া থেকে বাচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারি।

সকলের থেকে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় চলা, নিয়মিত ঘন ঘন হাত ধোঁয়া, প্রচুর পরিমান এ পানীয় পান করা, মাস্ক পরিধান করা ইত্যাদি যেসকল নিয়ম মেনে চললে নিরাপদে থাকা যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো মেনে চলতে পারি।

খাবার/প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র শেষ হয়ে যাবে! → আপাতত আমার যা যা লাগবে তা আমার কাছে আছে, আমি হিসাব করে খরচ করবো।

সব কিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে →প্রয়োজনীয় স্থান/সরবরাহ (যেমন হাসপাতাল, ফার্মাসী, খাবারের দোকান ইত্যাদি) খোলা থাকবে, সুতরাং আমর যখন যা লাগবে আমি পাবো।

কি হবে সামনে/কি করবো…… → আমরা সবাই ই একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, সমগ্র পরিস্থিতি আমি নিয়ন্ত্রন করতে পারবো না কিন্তু আমি নিজেকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে পারি।

আমি কিছুই করতে পারছি না→আমি বাসায় থেকে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে ভাইরাস সংক্রমণে বাঁধা দিচ্ছি/নিজের সহ আশেপাশের মানুষের উপকার করছি।

ভুলে গেলে চলবে না যে এই মুহূর্তে আমরা যে যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ নিরাপত্তা ও সাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভুমিকা রাখছি।

আমরা ছোট একটি পরীক্ষা করে দেখতে পারি। আপনার মাথায় এই পরিস্থিতি তে যে সকল নেতিবাচক চিন্তা গুলো ঘুরছে সেগুলো একটা কাগজে লিখে ফেলতে পারি এবং এই চিন্তা আপনার মনে কি অনুভূতি সৃষ্টি করে সেটিও লিখি। তারপর পরিস্থিতি টা কে ভালভাবে মূল্যায়ন করে দেখতে পারি যে একই চিন্তা টি কে ইতিবাচক ভাবে কীভাবে লিখা যায়। সর্বশেষে দেখি ইতিবাচক চিন্তা টি আমর মনে কি অনুভূতি তৈরি করে।

মনে রাখবেন এইরকম বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে জোর করে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা সহজ নয়, বরং কঠিন। কিন্তু নিজেকে ভালো রাখার জন্যে আমরা যতটুকু সম্ভব বাস্তবতা বিবেচনা করে চেষ্টা করে যেতে পারি।

Psycure

Scroll to Top