আমরা মানুষজন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভুমিকা পালন করি। একই ব্যাক্তি একেক জায়গায় একেক জনের সাথে একেক রকম আচরন করি। পারস্পরিক সম্পর্কটা পারস্পরিক আচরণের ধরনের উপর নির্ভর করে। আমাদের আচরণের ধরনের উপরেই নির্ভর করে কারো সাথে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ন হবে নাকি শত্রুতাপূর্ন হবে এটা জানা কথা এবং সরল কথা। আজকে এখানে আমি চেষ্টা করবো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ব্যাক্তির সাথে আমরা কয়ভাবে আচরন করি এবং সেই আচরনের মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি। আমরা জানার চেষ্টা করবো যৌক্তিক “না” কিভাবে বলতে হবে, কিভাবে কারো কাছে কিছু অনুরোধ করতে হবে এবং অনুরোধ করে না পেলে কিভাবে তার সাথে cope করতে হবে।

পারস্পরিক সম্পর্কে যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা ৩ ভাবে আচরণ করি। তা হলোঃ

১. আক্রমনাত্মক আচরণ (Aggressiveness): এখানে ব্যাক্তি তার চাওয়া, পাওয়া, মতামত এবং অনুভূতিগুলো সততার সাথে প্রকাশ করে কিন্তু এটার জন্য অন্যকে প্রতিদান দিতে হয় খারাপ ভাবে। কারণ এখানে ব্যাক্তি বাজেভাবে তার অধিকার, মতামত, অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যের মতামত, অনুভূতিগুলো কে অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অবহেলা এবং ছোট করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। আপনি হয়তবা কোন এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত, তখন আপনার কোন এক বন্ধু বা অন্য কেউ আপনাকে হয়তবা কোথাও ঘুরতে, বা একটু চা খেতে অফার করলো। তখন আপনি আপনার কাজের গুরুত্বটা বোঝানোর জন্য এমনভাবে রিয়েক্ট করলেন যে এরপর থেকে ঐ বন্ধু আপনাকে আর কখনও কোন অনুরোধ করতে আসলো না। আপনি তার অনুরোধ টা না রাখার যে কারণ গুলো বলছেন সবগুলোই ঠিক বাট আপনার বলার ধরনটা ছিল উচ্চ স্বরে, রাগত স্বরে, আক্রমনাত্মক। আপনার বন্ধু তার জায়গা থেকে ঠিক, যে সে তার বন্ধু কে অনুরোধ করতেই পারে। এটা তার অধিকারের মধ্যে পড়ে। আপনিও না করতেই পারেন যেটা আপনি করছেন বাট আক্রমনাত্মক ভাবে। এখানে আপনি আপনার মতামত, অধিকার, অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আপনার বন্ধুর অনুভূতিকে অবজ্ঞা করেছেন। তাকে ছোট করেছেন। এ ধরনের ব্যক্তিরা কখনও অন্যের প্রশংসা করে না। তাদের চেষ্টাই থাকে অন্যকে নিচে নামানো। কারনটা কি এ ধরনের আচরণের? কারনটা হলো ব্যক্তির মাথায় সবসময় এটাই থাকে যে, আমি ঠিক, তুমি ঠিক না… I am ok, you are not ok… তো যেহেতু তার চিন্তা চেতনায় বিরাজ করে.. আমিই ঠিক, বাকিরা বেঠিক, তাই নিজের চিন্তা চেতনা বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্যের অধিকার কে ভায়োলেট করাটা এদের স্বভাবের অংশ হয়ে যায়। এ ধরনের আচরণের সুবিধা হল.. ব্যক্তি সাময়িকভাবে যা চায় তাই পায় কিন্তু এতে করে তার শত্রু বাড়ে এবং বাকিরা তাকে avoid করে।

২। নিষ্ক্রিয় আচরন (Passive behaviour ): এটা হলো আক্রমনাত্মক আচরনের উল্টোটা। এখানে ব্যক্তি অন্যের মতামত, অনুভূতি, অধিকার, চাওয়া-পাওয়ার গুরুত্ব দিতে গিয়ে নিজের অধিকার চাওয়া পাওয়া অনুভূতিকে জলাঞ্জলি দেয়। নিজের ভাল লাগা মন্দ লাগা মুখে বলে প্রকাশ করতে পারে না। যেটাকে আমরা বলি বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না। অন্যের ইচ্ছার সাথে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া, না বলতে না পারা। মিনমিন করে, নমনম ভাবে কথা বলা। না করার যথেষ্ট কারন থাকলেও অপছন্দনীয় হওয়ার ভয়ে জোরালো ভাবে না বলতে পারে না। লোকজন তাকে ছেড়ে যাবে, সে একা হয়ে যাবে, নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না.. এ সব চিন্তা ভাবনা তার মাথায় ঘোরে। তারা চায় সবাই তাদের পছন্দ করুক। তাদের চিন্তা ভাবনার সামারি হলো…. তুমিই ঠিক আমি বেঠিক.. You are ok, I am not ok…. তো তুমিই যেহেতু ঠিক তাই তোমার সব কিছুই আমার কাছে ঠিক। কোন কিছুতেই আমার না নাই। সমাজে এ ধরনের অনেক মানুষ আছে যারা “না” বলতে না পারার কারনে অনেক সমস্যায় পড়ে, জীবনে অনেক বড় দূর্ঘটনায় পতিত হয়। এদের self esteem খুবই দূর্বল থাকে। এবং যেহেতু এরা এদের মনের সুখ দুঃখ, চাওয়া পাওয়া কারো সাথে শেয়ার করে না, সব কিছু মনে লুকিয়ে রাখে তাই পরবর্তীতে নানা রকম মানসিক সমস্যা যেমন সোমাটোফরম ডিসওর্ডার এ ভোগে। এদের অনেক multiple unexplained physical symptoms দেখা দেয় যেটার জন্য ডাক্তার গুলে খেলেও রোগ ভাল হয়না। কারন তাদের সমস্যাটা শরীরে হলেও সমস্যার কারনটা মনে। এই জন্য ডাক্তার যতই ঔষধ দিক কোন কাজ হয় না। যতই পরীক্ষা নিরীক্ষা করুক সব কিছুই নরমাল। এরপর শেষ পর্যন্ত যখন মনোবিজ্ঞানীদের কাছে আসে তখন মনোবিজ্ঞানী বোতলের চিপিটা খুলে দেয়, রোগী ফরফর ফরফর করে সারা জীবনের যত না বলা কষ্টের অভিজ্ঞতা সব বলতে শুরু করে এবং সমস্যাও ভাল হয়ে যায়।

৩। Assertive behaviour : বাংলাটা কি হবে সেটা সঠিক জানা নাই বাট দৃঢ়তাপূর্ন আচরণ হতে পারে। এখানে ব্যাক্তি নিজের চাওয়া পাওয়া, অনুভূতি, অধিকার গুলো সততার সাথে প্রকাশ করে অন্যকে কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না করে, অন্যকে ছোট না করে। অর্থাত অন্যের অধিকার, অনুভূতিগুলোকে ব্যক্তি কনসিডার করেই নিজের মতামত প্রকাশ করে এবং নিজের জন্য যা করা দরকার সেটা করে। ব্যক্তির ব্যবহারে দৃঢ়ভাব থাকে, আক্রমণাত্বক ভাষা থাকে না। ব্যক্তি নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সহজেই “না” বলতে পারে বাট এতে অন্যের চাওয়া পাওয়া কে অসম্মান করা হয় না। ব্যক্তির চিন্তা চেতনায় থাকে… তুমিও ঠিক আমি ও ঠিক। You are ok, I am also ok…

Assertive ব্যক্তিদের কয়েকটি গুণাবলিঃ

১. এরা যেকোন ঘটনার both side দেখে। আমি দেখি 9 এটাও ঠিক, আমার বিপরীতে যে আছে সে দেখে 6, তারটাও ঠিক।

২. এরা অন্যের অধিকার এবং প্রয়োজনীয়তা চিনতে পারে

৩. এরা নিজেদের একশন এর দায়িত্ব নিজেই নিতে পারে। বিফলের জন্য অন্যকে দোষারোপ করে না।

৪. এরা নিজের ভালোর জন্য অন্যকে put down করে না।

৫. তারা সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করে। এখন আমরা দেখবো কিভাবে অন্যকে কষ্ট না দিয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য “না” বলা যায়ঃ

How to say “NO”…

১. ভদ্রভাবে বলা।

২. যা বলার দৃঢ়ভাবে বলতে হবে

৩. আঘাত করে কথা বলা যাবে না

৪. অন্যের অনুভূতি চিনা এবং সম্মান করা

৫. না বলার জন্য মিথ্যে কোন (lame excuse) অজুহাত না দেয়া। সঠিক কারনটা দৃঢ়ভাবে বলা।

৬. সবসময় সম্মান প্রদর্শন করা

৭. Eye contact, steady and firm voice maintain করা।

How to make request :

১. যাকে অনুরোধ করবো তার অনুরোধ রাখার মত অবস্থা আছে কিনা সেটা আগে চেক করা।

২. চোখে স্বাভাবিক চোখ রেখে প্রফার মুখভঙি করা

৩. প্রয়োজনীয়তা টা দৃঢ়ভাবে, পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করা,

৪. ভদ্রভাবে, সরাসরি এবং লজ্জাবোধ না রেখে বলা

৫. তার প্রয়োজনীয়তা কে ও সম্মান করা।

৬. এমন ভাব না করা “যেন যা চাইবো সেটা আমার পাওয়ার অধিকার আছে”। যেমনটা আমরা ব্যাংকে টাকা তোলার সময় করি।

অনুরোধ করে না পেয়ে কিভাবে cope করবোঃ

How to Cope with Refusal:

১. ভদ্রতা বজায় রাখা

২. ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তা কে সম্মান করা।

৩. আঘাত দিয়ে কথা না বলা

৪. সমালোচনা না করা যাতে পরবর্তীতে আবার অনুরোধ করতে আপনারই লজ্জা লাগবে

৫. অনুরোধ করলেই পাব না, এই বাস্তবতা মেনে নেয়া।

৬. সুন্দরভাবে বিদায় নেয়া। ” ও আচ্ছা, ঠিক আছে, অন্য সময়ে হবে তাহলে”.

আসুন আমরা সবাই একে অন্যের মতামতকে সম্মান করি। অন্যের দৃষ্টিভঙিকে শ্রদ্ধা করে নিজের মতামত প্রকাশ করি নিরপেক্ষভাবে। ব্যক্তিকেন্দিক সমালোচনা না করি।

Be assertive, practice assertive and enjoy every relationship.

Psycure

Scroll to Top