পৃথিবীতে অনেকেই আছেন, যারা স্বপ্ন দেখছেন এটা মনে আসার পরেও স্বপ্ন দেখা চালিয়ে যেতে পারেন। মানে সচেতন অবস্থাতে ও স্বপ্নজগতে থাকতে পারেন। আর এই ‘সচেতন স্বপ্ন’কেই ইংরেজীতে বলে লুসিড ড্রিমিং। চেতন ও অবচেতন মনের একটি বিরল সংমিশ্রণে এমনটা হয়। সাধারণত লুসিড ড্রিমিং এর সময় স্বপ্ন বেশ পরিষ্কারভাবে দেখতে পারা যায় এবং স্বপ্নে প্রদত্ত অনুভুতিগুলো খুবই তীব্র হয়, প্রায় বাস্তবের মতন এবং চাইলেই স্বপ্ন দৃশ্য নিজের ইচ্ছের মতন করে নেওয়া যায়। স্বপ্ন হল ধারাবাহিক কতগুলো ছবি ও আবেগের সমষ্টি যা ঘুমের সময় মানুষের মনের মধ্যে আসে। এগুলো কল্পনা হতে পারে, অবচেতন মনের কথা হতে পারে, বা অন্য কিছুও হতে পারে। এর শ্রেণীবিন্যাস করা বেশ কষ্টকর।

সাধারনত মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে সবগুলো মনে রাখতে পারে না।স্বপ্নের অর্থ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করেছে যা সময় এবং সংস্কৃতির মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে। অনেকেই স্বপ্ন সম্পর্কে ফ্রয়েডীয় তত্ত্বকে সমর্থন করেন যে স্বপ্ন মূলত মানুষের গোপন আকাঙ্ক্ষা এবং আবেগগুলির বহিঃপ্রকাশ । অন্যান্য বিশিষ্ট থিওরিগুলোতে সুপারিশ করা হয়েছে যে স্বপ্ন মেমরি গঠন, সমস্যা সমাধান এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয়করণ করতে সাহায্য করে ।

মনোবিজ্ঞানের একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় এই লুসিড ড্রিমিং। এটি হলো এমন এক ধরনের স্বপ্ন যেখানে চেতনা কাজ করে। স্বপ্নের মধ্যেই বুঝতে পারা যে স্বপ্ন দেখছেন এবং ঘুম ও ভাঙ্গে না।

মনোবিদদের কাছে লুসিড ড্রিমিং একটি রহস্যময় কিন্তু লোভনীয় গবেষণার বিষয়বস্তু। প্রায় সকলেই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে লুসিড ড্রিমিং অনুভব করলেও ঘটনাটি ঘটার ফ্রিকোয়েন্সি অনেক কম। তবে কিছু লোক রয়েছে, যারা অন্যদের তুলনায় বেশ ঘনঘন লুসিড ড্রিমিং করে থাকেন। লুসিড ড্রিমিং এর সময় ড্রিম স্টেটেও যেহেতু আমাদের মন সচেতন থাকে তাই বাস্তব ঘটনা যতটা পরিস্কারভাবে আমাদের মনে থাকে, লুসিড ড্রিমও সেরকমই মনে থাকে। লুসিড ড্রিম আর বাস্তব ঘটনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায় হলো লুসিড ড্রিম। আপনি যখন স্বপ্নের মাঝেই বুঝতে পারেন এটা বাস্তব নয়, আপনি আসলে স্বপ্ন দেখছেন এবং নিজের ইচ্ছেমত ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন- তখন সেটা হয় একটা লুসিড ড্রিম। ২০ শতাংশ মানুষ নিয়মিত ঘুমের মাঝে লুসিড ড্রিম দেখে থাকেন। নিয়মিত বলতে মোটামুটি মাসে একবার করে লুসিড ড্রিম হতে দেখা যায় তাদের।

৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের কথা। সেইন্ট অগাস্টিন অব হিপ্পো একটি চিঠি লিখলেন ডক্টর গেনডিয়াসের কাছে। সেই চিঠিতে তিনি বললেন এমন একজন মানুষের কথা যে কিনা স্বপ্ন দেখার সময় বুঝতে পারেন তিনি স্বপ্ন দেখছেন এবং ঘুমের মধ্যে নিজের স্বপ্ন নিজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেন।এই একই ঘটনা ঘটে অ্যারিস্টোটলের সাথে। তিনি লিখেছিলেন, মাঝেমধ্যে ঘুমানোর পরেও তাঁর সচেতন একটা অংশ জাগ্রত থাকে এবং স্বপ্ন দেখার মুহূর্তে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি স্বপ্ন দেখছেন।যা কিনা খুবই স্বাভাবিক।

১৯৫৩ সালে বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন ও ঘুমের মধ্যে একটা যোগসূত্র গেঁথে দেন। তারা বের করতে সক্ষম হন যে মানুষ যখন ঘুমের প্রথম স্তরে থাকে তখন তাদের শরীর বেশ নড়া চড়া করে। ঘুমের চতুর্থ স্তরকে ‘র‌্যাম স্লিপ’ বলা হয়। এই স্তরে এসে চোখের নড়াচড়া বেড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় শরীরের নড়াচড়া। অর্থাৎ মানুষ গভীর ঘুমে প্রবেশ করে। এক রাতে মানুষ চার-সাতবার এই স্তরে প্রবেশ করে। তখনই মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ‘র‌্যাম স্লিপ’-এর সময় কারো ঘুম ভেঙে গেলে ঐ সময়ে দেখা স্বপ্নের ৯০ শতাংশই একজন স্বাভাবিক মানুষ মনে রাখতে পারে। এটি সবার জন্যই সত্য। যারা বলেন তারা স্বপ্ন দেখেন না তাদের জন্যেও।

গভীর ঘুম ছাড়াও আমরা অনেক সময় স্বপ্ন দেখি। অর্থাৎ তখন আমরা বুঝতে পারি যে আমরা স্বপ্ন দেখছি। বিজ্ঞানীরা এর নাম দেন ‘লুসিড ড্রিমিং’। ড্রিম ফাউন্ডেশন নামের কানাডার একটি সংস্থা মনে করে এই স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে। তাদের মতে লুসিড ড্রিমিং মানুষের চিন্তা শক্তি বাড়ায় ও মানুষকে সৃজনশীল হতে সাহায্য করে।কোনো বিজ্ঞানীর মতে, স্বপ্নের প্রতিটি অংশের সর্বোচ্চ স্থায়ীত্ব ১৪ সেকেন্ড। আবার কারো মতে তা মাত্র ৩ সেকেন্ড। আবার স্বপ্ন যে সাদাকালো হয় তা নিয়ে দ্বিমত আছে খুব কম। লুসিড ড্রিমিং আসলে নতুন কিছু নয়, যুগ যুগ ধরে অনেকেরই এই অভিজ্ঞতা হয়েছে!

Psycure

Scroll to Top