রিভার্স সাইকোলজি হলো মনের সেই সাময়িক অবস্থা বা কৌশল যখন আপনি কাউকে এমন কিছু করতে বলেন, যা আপনি কখনই চান না সে করুক, বা এমন কিছু না করতে বলা, যা আপনি চান সে অবশ্যই করুক অর্থাৎ আপনি চাচ্ছেন একটি কিন্তু ভান করছেন তার উল্টোটি । কাউকে দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নিতে চাইলে অনেকে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করে থাকে । এই কাজটাই মানুষ হরহামেশা করে থাকে।

কিছু টিচার আছে, যারা অনেক সময় স্টুডেন্টদের, বলতে থাকেন ,“তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না?”, “তুমি এটা পারবা না” ইত্যাদি। এসব টিচার কিন্তু অবচেতনমনে আমাদের উপর রিভার্স সাইকোলজিই ব্যবহার করে। আমাদের ভেতরের সত্ত্বাটাকে জাগিয়ে দিতে চায় রিভার্স সাইকোলজির মাধ্যমে, “তোমাকে দিয়ে হবে না”। আর তখন আমাদের ভেতর থেকে উঠে আসে, “আমাকে পারতেই হবে”। এটাই রিভার্স সাইকোলজি।

অনেক সময় অনেক জায়গায় এমন কিছু লেখা থাকে। যা আমারা প্রায়ই দেখে থাকি —

Do Not Read This !!

Don’t try this at home!!

এই যে নিষেধ করা পরেও আপনি আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে লেখাটা পড়ছেন, এটাকেই বলে রিভার্স সাইকোলজি !! আপনি যদি বুঝতে পারেন কারো ভিতরে এর মাত্রা অনেক বেশি প্রকট , তাহলে তার কাছ থেকে কিছু আদায় করবার জন্য তাকে উল্টোটা বলুন। এই যেমন – আমি জানি তুমি এই কাজটি করতে পারবে না। দেখবেন, সে আপনাকে ভুল প্রমাণ করবার জন্য কাজটি করে দিবে !!

রিভার্স সাইকোলজি অনেক সময়ই কষ্টের কারণ হয়ে থাকে। তাকে যা করতে নিষেধ করা হয় সে তাই করতে শুরু করে। সে ভাবে তার মানসিক স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। এই কষ্টের সূত্রপাত নেহাত অবচেতন মন থেকে। আর এই অবচেতন মনটাই নিয়ন্ত্রণ করে চেতন মনকে।

এই রকম আরো অনেক কাজ আছে। যেমন :

*দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ। দেখবেন সেই দেয়ালেই পোস্টার লাগাতে ইচ্ছে করবে । একবার ১৬ ই ডিসেম্বর এর সময় এইরকম লেখা একটি দেয়াল জুড়ে আমরা কাগজের পতাকা লাগিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। আমাদের কি উচ্ছ্বাস উদ্দিপনা , এই রকম কিছু কাজ করছিলো।

*বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ”! এরকম লেখা দেখলেই কিন্তু আমাদের ইচ্ছে করে যে, ঢুকেই দেখি না, কী আছে এর ভিতরে?

*“বাস থামানো নিষেধ”! দেখবেন ঠিক সেখানেই বাস এসে দাঁড়াবে, অথচ একটু সামনেই হয়ত বাস স্ট্যান্ড।

*”ফুল ছেড়া নিষেধ”! দেখা যায় যে , ওখান থেকেই মানুষ ফুল ছিড়বে ।”

*দেখবেন সিগারেটের প্যাকেট এর গায়ে লেখা থাকে, সংবিদ্ধিকরণ : ধূমপান মৃত্যুর কারণ। তার পরও মানুষ নিষেধ শুনতে চায় না। নিষেধ ভাঙা আমাদের বেশী প্রিয়। কারণ তাতে যে নিষেধ ভাঙ্গার উত্তেজনা আছে।

আমাদের সবার সাইকোলজিই এমনই। আমাদেরকে যেই কাজটা করতে নিষেধ করা হবে, সেটা করা লাগবেই। আমাদের এইরকম অদ্ভুত মনোবৃত্তির নামই – রিভার্স সাইকোলজি।

১৯৮২ সালে উইলসন আর ল্যাসিস্টার একটা পরীক্ষা করেন। তারা একদল বাচ্চাকে অনেকগুলো খেলনা দেন , এবং তারা বসে বসে তাদের লক্ষ্য করতে লাগলেন। দেখা গেল, সব গুলো খেলনার মধ্যে কিছু খেলনা বাচ্চাদের বেশী পছন্দ হয়েছে , সেগুলা নিয়েই তারা বেশি খেলা করছে । আবার কিছু খেলনা বাচ্চাদের পছন্দ হয় নি। এখন তার মধ্য থেকে উইলসন আর ল্যাসিস্টার একটি খেলনা খুঁজে বের করলেন, যেটা বাচ্চারা কেউ নেয় নি ।

তারপর বাচ্চাদের দুইটা গ্রুপে ভাগ করলেন। একটা গ্রুপকে আগের মতই যেকোন খেলনা নিয়ে খেলার অনুমতি দিলেন। আরেকটা গ্রুপকে বললেন, “তোমরা সব খেলনা নিয়েই খেলতে পার, তবে এই খেলনাটা বাদে।একটু পর দেখা গেল ২য় গ্রুপের বাচ্চারা সেই খেলনা নিয়েই উঠে পড়ে লেগেছে। তারা আগের চেয়ে ৩ গুণ বেশী সময় নিয়ে সেই খেলনা দিয়ে খেলছে। যেটা তাদের নিষেধ করা হয়েছে তারা সেটাই করছে।

রিয়্যাকটেন্স থিওরি বলে, মানুষ যখন অনুভব করে করে যে, তার সেন্স অফ কন্ট্রোল অথবা মানসিক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে, তখন মানুষ চেষ্টা করে তা প্রতিরোধ করতে। এর জন্যে তাকে যা করতে বলা হয়, সে তা না করতে, তার বিপরীতটা করতে বদ্ধপরিকর হয়।মানুষ নিজের ফ্রি উইলস অনুযায়ী কাজ করতে বেশী পছন্দ করে। যখনই মানুষের ফ্রি-উইল টাকে শর্ত-আরোপ করে বেধে ফেলার চেষ্টা করা হয় তখনই মানুষ অবচেতন মনে এর বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করে।

রিভার্স সাইকোলজি বেশি কাজ করে খুব অল্পতেই রেগে যাওয়া, ইগোস্টিক, আবেগী, একরোখা, আত্ম-প্রবণ, ইনডিসিশনে ভোগা মানুষদের উপর। এবং দৈনন্দিন জীবনে তারা রিভার্স সাইকোলজির ফাঁদে পড়ে বিপদগ্রস্থ হয় প্রায়ই। অন্যদিকে মেন্টালি স্টেবল মানুষদের এ নিয়ে খুব বেশি ভুগতে হয় না রিয়েল লাইফে। তারা হুট করে ডিসিশন নিয়ে নেয় না। সর্বোপরি আপনি যদি মানসিকভাবে শক্তিশালী না হন, তাহলে রিভার্স সাইকোলজির কাছে হেরে যাবেন।তাই মন কে সব সময় ভালো কাজ করার উপর নিয়োজিত রাখুন।

সূএ _ উইকিপিডিয়া, প্রথম আলো, THE Daily Star.

 

Psycure

Scroll to Top