মাদক এর আভিধানিক অর্থ হলো ঔষধ।যে সমস্ত প্রাকৃতিক দ্রব্য বা রাসায়নিক দ্রব্য গ্রহন করার ফলে এক জন মানুষের মনের অনুভূতি ও চিন্তা চেতনা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় রুপান্তরিত হয় অর্থ্যাৎ মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে তাকেই মাদক বলে।
মাদকাসক্তি হলো একটি দীর্ঘ স্থায়ী ( chronic) ও পুনরাবৃত্তিক ( relapsing) মস্তিষ্কজনিত ( brain diseases) রোগ। যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষতিকর পরিণতি জানা সত্বেও দ্রব্য গ্রহনের তীব্র আকাঙ্খা এবং ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা,এটা মানসিক নির্ভরতা (Psychological dependence) নামেও পরিচিত।মাদক ব্যবহার হঠাৎ বন্ধ করলে শরীরের উপর উক্ত মাদকের প্রত্যাহার জনিত মারাত্নক প্রতিক্রিয়া (withdrawal symptom) দেখা যায়।
মাদকাসক্তিরর কারনসমূহঃ
মূলত ৩ টি কারনে মাদকাসক্তি ঘটে–
১/ শারীরিক গঠনগত বা জৈবিক
২/ ব্যক্তিভিত্তিক
৩/ পারিপার্শ্বিক বা পরিবেশগত,
যেমন — ★বন্ধুদের প্রভাব ★কৌতুহল বা নতুন অভিঞ্জতা গ্রহনের ইচ্ছা ★নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ★বেকারত্ব বা অবসর কাটানোর সুযোগ না থাকা। ★পরিবারের অন্যকোন সদস্য মাদক গ্রহন করলে। ★মাদকের ক্ষতিকারক প্রভাব বা কুফল সম্পর্কে না জানা। ★হতাশা, বিষন্নতা ★ মূল্যবোধের অভাব ★পরিবারের লোকদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব ও সন্তানদের প্রতি সঠিকভাবে লক্ষ্য না রাখা। ★ হাতের কাছে সহজেই মাদক দ্রব্য পাওয়া
মাদকাসক্তির ক্ষতি সমূহঃ-
মাদক গ্রহন করার ফলে একজন ব্যক্তির যে সকল ক্ষতি হয় তা হলো—
১/ শারীরিক ক্ষতিঃ-
মাদকদ্রব্য সেবনে সবচেয়ে মারাত্নক ক্ষতিহল মানুষের শারীরিক ক্ষতি।যার কারনে একজন মানুষের শরীর ক্রমে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।মাদকদ্রব্য সেবনে মানুষের দৈহিক যে সমস্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয় তা হলো– ★ হৃদযন্ত্র( হার্ট):- হৃদযন্ত্রেরর কার্যকারীতা কমে যায়,হৃদযন্ত্র বড় হয়ে যায়। ★ রক্তপ্রনালী:- রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়,শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ★চোখঃ- দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। ★যকৃত( লিভার):- জন্ডিস, হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, ক্যান্সার হয়। ★পরিপাকতন্ত্র ঃ- হজম শক্তি কমে যায়,আলসার, এসিডিটি,কৌষ্ট্যকাঠিন্য হয়। ★বৃক্ক( কিডনি):- কিডনি ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ে। ★প্রজননতন্ত্র :- যৌন ক্ষমতা কমে যায়,বিকৃত সন্তানের জন্ম দেয়। ★ত্বক ( স্কিন):- চামড়া খসখসে হয়ে যায়,চুলকানি হয়,ফোঁড়া ও ঘা থেকে অনেক সময় শরীরে পচন ধরে।
২/মানসিক ক্ষতি:-
মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অন্যতম আরেকটি ক্ষতি হলো মানসিক ভারসাম্যহীনতা। যে কারনে প্রায় আপনজনকেও চিনতে পারে না।স্ত্রী, সন্তান, বাবা মা কে ও চিনতে ভুল করে।ফলে পরিবারে অশান্তি নেমে আসে।অন্যান্য মানসিক ক্ষতির দিক হলো- ★ স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়া ★ পাগলামী করা এবং অসংলগ্ন কথা বলা ★ উদ্বিগ্নতা ও হতাশ গ্রস্ত হওয়া ★ চিওবৈকল্য, দৃষ্টভ্রম হওয়া ★ অনিদ্রা ও অমনোযোগীতা দেখা দেয় ★ নুপুংসক হয়ে যাওয়া ★ খাবারের প্রতি অনিহা ★খিটখিটে মেজাজ ও অলসতা ★ আপন জনের প্রতি অনিহা ও স্নেহ ভালবাসা কমে যাওয়া।
৩/ পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষতিঃ-
মাদকাসক্তদের একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্র।কারন যে পরিবারে মাদকাসক্ত ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে,সে পরিবারে কোন সুখ, শান্তি থাকে না।দিন- রাত সেখানে মারামারি, ঝগড়া লেগেই থাকে।তার নেশার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে না পারলে পরিবারের সদস্যদের অলংকার, টাকা- পয়সা চুরি করে, সেটা না পারলে আত্নীয়- স্বজনদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ নিয়ে তার চাহিদা মেটায়।যদি তাও সম্ভব না হয় তখন সে সমাজের রাস্তাঘাটে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি প্রভূতি অপকর্ম শুরু করে।সমাজে চরম বিশৃংখলা ও অশান্তি দেখা দেয়।বর্তমানে দেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রামে গঞ্জে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে।পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা একে বারে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। যা অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
৪/ মাদকাসক্ত নারীর ক্ষতি সমূহঃ-
মাদক গ্রহনে নারীরা শারীরিক ভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।যেমন- ★ নারীর প্রজনন ক্ষমতা হৃাস পায় ★অনিয়মিত মাসিক হয় ★ জরায়ুতে বিভিন্ন প্রকার রোগ হয় ★ যৌন রোগ দেখা দেয় ★অপুষ্ট সন্তান জন্মদান ★ অনেক সময় ভূমিষ্ট সন্তান ও মাদকাসক্ত হয়ে জন্মাতে পারে। ★ মাদকাসক্তেরর কারনে এইডস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
৫/ অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ-
মাদক দ্রব্য উৎপাদন ও সেবনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।এ ব্যবসা অধিক লাভ জনক। বিধায় এতে জড়িয়ে পড়ছে নিম্ন থেকে উচ্চ শ্রেনির মানুষেরা। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির দ্রব্য সেবনের জন্য দৈনিক ব্যয় হয় ৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।এভাবে প্রতিদিন দ্রব্য সেবনের পিছনে টাকা খরচ করতে গিয়ে একটা সময় ব্যক্তি বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
যে ভাবে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চেনা যায়-
১/ আচরনের পরিবর্তন ২/ অনিদ্রা ৩/গুছিয়ে কথা বলার অপারগতা ৪/খাবার গ্রহনের অনিহা ৫/অস্থিরতা ৬/মেজাজ কখনো খারাপ কখনো ভাল। কখনো চুপচাপ আবার কখনো অনবরত কথা বলে। ৭/বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বেশি সময় নষ্ট করে ৮/বিনা কারনে অর্থের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এবং টাকা না দিলে অশান্তির সৃষ্টি করা। ৯/দিনের একটা বিশেষ সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য মন চঞ্চল হয়ে ওঠা। ১০/শরীর ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাওয়া। ## মাদকাসক্তি রোধে পরিবারের করনীয় ১/ সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে তোলা ২/সন্তানদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত রাখতে হবে ৩/ সন্তানদের ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে ৪/ অবসর সময় সন্তানদের সাথে কাটাতে হবে এবং তাদের স্নেহ ভালবাসা দিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে ৫/ সন্তানদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে ৬/ সন্তানদের সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ক্ষমতা ও। নিজের প্রতি আত্ন বিশ্বাসী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে ৭/ স্বামী, স্ত্রী ঝগড়া থাকলে তা অবিলম্বে ত্যাগ করতে হবে।