প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার-নামটি শুনলেই বোঝা যায় এটি একটি পারসোনালিটি বা ব্যক্তিত্বজনিত সমস্যা, যা মানুষের অস্বাভাবিক চিন্তার সাথে সম্পর্কীত। DSM 5 (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition) এ বর্ণিত দশ প্রকারের ব্যক্তিত্বজনিত মানসিক সমস্যার মধ্যে এটি একটি এবং এর অবস্থান Cluster A তে।
যারা দীর্ঘ সময় ধরে অতিমাত্রায় সন্দেহপ্রবণ এবং কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেন না তারা সাধারণত প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার নামক মানসিক ব্যাধির আওতায় পড়েন। এ সকল ব্যক্তিরা যথাযোগ্য কারণ ছাড়াই মনে করেন অন্যরা তাদের ক্ষতি করতে বা তাদের ধোঁকা দিতে চাচ্ছে। এমনকি তারা তাদের নিকটাত্মীয় বা পরিচিত মানুষজনের আনুগত্য বা বিশ্বস্ততার উপরও অহেতুক সন্দেহ পোষণ করে থাকেন। যেমন- প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সর্বক্ষণ তার মাকে সন্দেহ করেন এবং মনে করেন তার মা তার ক্ষতি করতে চাচ্ছে। তাদের মনের অবাঞ্চিত ভয়ের কারণে তারা কারো উপরই ভরসা রাখতে পারেন না। যার কারণে তারা সবার সাথে একত্রে কোনো কাজও করতে পারেন না। এসকল ব্যক্তিরা অন্যের করা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। এদের মনে সম্মানহানীর একটা ভয় সর্বদাই থাকে। যার ফলে যে কোনো পরিস্থিতি বা ঘটনাতেই তারা কিছু ভীতিকর অর্থ প্রদান করে থাকেন যার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা থাকে না। এরা পাল্টা আক্রমণাত্মক মনোভাবে বিশ্বাসী এবং এই কারণে অল্পতেই রেগে যাওয়ার একটা প্রবণতা এদের আচরণের মধ্যে দেখা যায়। এদের আচরণের মধ্যে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যেমন- একাকীত্ব, বৈরীভাব, উদাসীনতা, একগুঁয়ে ভাব ইত্যাদি।
সাধারণত এই ধরণের মানসিক সমস্যা বয়ঃসন্ধিকালের পর থেকে শুরু হয়। তবে এর সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত অস্পষ্ট। কারো কারো মতে, এটি জীনগত কারণে হয়ে থাকে। যেমন- পরিবারের কোনো সদস্যের যদি ব্যক্তিত্বজনিত বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যা থেকে থাকে তবে সেই ব্যক্তির প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, পরিবেশগত কারণেও এই রোগ হয়ে থাকে। তাদের মতে, শৈশবের শুরুতে শারীরিক ও মানসিক আঘাতের কারণে এই রোগ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার হার মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি।
প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারভুক্ত রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা অনেক কষ্টকর। কারণ কখনও কখনও এসকল রোগীরা চিকিৎসকেও অবিশ্বাস বা সন্দেহ করেন। তখন তারা চিকিৎসকের দেওয়া ঔষধ বা পরামর্শ অনুসরণ করেন না। এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (সাইকিয়াট্রিস্ট) অথবা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সাহায্য আবশ্যক। এসকল রোগীর চিকিৎসার জন্য ঔষধের পাশাপাশি ‘টকিং থেরাপি’ বা সাইকোথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জীবনব্যাপী সমস্যা। চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থতা সম্ভব না হলেও এই রোগের লক্ষণগুলোকে কমানো এবং রোগীর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, এসকল রোগীরা অত্যন্ত কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করে থাকেন। তাই এদের সাহায্য এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। আবার, অনেকেই এই রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না। সেক্ষেত্রে সবার আগে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে এই রোগ এবং রোগের আধুণিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে।
References:
Beck, A. T., Freeman, A., & Davis, D. D. (2004). Cognitive therapy of personality disorders (2nd ed.). New York, NY, US: Guilford Press.
Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition (DSM 5), 2013.
https://www.brightquest.com/paranoid-personality-disorder/
https://www.psychologytoday.com/intl/conditions/paranoid-personality-disorder