আপনি যে ই হন না কেন ছাত্র,পেশাজীবি,সন্তানের পিতামাতা অথবা অন্যকেউ ; আপনি কিন্তু প্রতিনিয়তই নতুন কিছু শিখছেন।এটা হতে পারে গিটার বাজানো,কোন নতুন ভাষা, কোন সংখ্যার বর্গমূল নির্ণয় অথবা কিভাবে জনসম্মুখে নির্দ্বিধায় কথা বলা যায় তা। প্রকৃতপেক্ষে আমাদের মনমানসিকতাটাই নতুন নতুন তথ্যের সাথে সম্পৃক্ত।
কোন কিছু দ্রুত শেখা ও দ্রুত স্মরণ করার জন্য মস্তিষ্ককে অভ্যস্ত করার কিছু উপায় দেয়া হলো :
১।মস্তিষ্ক খালি রাখাতে ব্যায়াম ; কাজকর্ম আমাদের শরীরের জন্য ভাল তা সকলেরই জানা। তবে তা যে মস্তিষ্কের জন্যও উপকারি তা হয়তো ভুলে গিয়েছি। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শিখন ও স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই আপনি যদি কিছু স্মরণ করতে না পারেন বা কোন গাণিতিক সমস্যা সমাধানে দ্বিধান্বিত হন , তাহলে এখনি তা রেখে হাঁটাচলা করার চেষ্টা করুন আথবা চটজলদি একটু জীম থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় , স্মৃতির ওপর ব্যায়ামের তাৎক্ষনিক প্রভাব আছে। সেখানে দেখা যায় যে, মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যায়াম যুবক এবং বৃদ্ধ উভয়েরই শিখন ও স্মৃতিশক্তিকে বৃদ্ধি করে ।
২। বারবার লিখে লিখে শেখা ; এটা অনেকটা একই কাজ বারবার করার মতো , কিন্তু এই সাধারণ কাজটি আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খুবই ফলপ্রসু।গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে , কোনো কাজ বা সমস্যা কে যদি তালিকা আকারে লিখে লিখে সমাধান করা হয় তবে তা স্মরণ রাখা সহজ। বরং সেই কাজটি বারবার পড়ে স্মরণ রাখার চেয়েও বেশি ফলপ্রসু ।
অন্য আরেকটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, শিক্ষকের দেয়া লেকচার যদি কম্পিউটারে টাইপ না করে হাতে লিখে নোট করা হয়, তবে তা সহজে স্মরণ থাকে ।
৩। যোগব্যায়াম ; আমরা অনেকেই জানি মস্তিষ্কের মধ্যে “গ্রে মেটার” নামের একটি অংশ আছে। যোগব্যায়াম এই অংশের সমৃদ্ধি ঘটায় যা আমাদের পেশি নিয়ন্ত্রণ, স্মৃতি, সিদ্ধান্ত গ্রহন, দেখা , কথা বলা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত । গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন করেন,তাদের স্মৃতিশক্তি তুলনামুলক বেশি ভাল । ২০১২ সালে আরেকটি গবেষনায় চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে যে, মাত্র ২০ মিনিটের যোগব্যায়াম শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আশাতীত রকম বৃদ্ধি করে। যার ফলে তারা কোন কাজ খুব দ্রুত ও বেশি নির্ভুল ভাবে করতে পারে।
৪। বিকেল বেলায় পড়াশুনা বা চর্চা ; আপনি যদিও নিজের ব্যাপারে আত্নবিশ্বাসী যে আপনার জন্য সকাল বা রাত্রের পড়া বা কাজ বেশি স্মরনে থাকে তবুও গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে ,দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির ক্ষেত্রে বিকেল বেলায় কোনো কাজে মন নিবন্ধ করার একটি বড় প্রভাব আছে। তার মানে, আপনি যদি বিকেল বেলা মনোযোগের সাথে কোন কাজ করেন , তবে তা অপেক্ষাকৃত বেশি স্মরণে থাকবে।
৫। নতুন জিনিসটিকে জানা জিনিসের সাথে সম্পর্কিত করুন ; আপনি নতুন যে বিষয়টি শিখছেন তা আপনার অতীতের পরিচিত বা স্মরনীয় কিছুর সাথে সম্পৃক্ত করুন। উদাহরন সরূপ, আপনি যদি নতুন কোনো গল্প পড়েন, তাহলে গল্পের চরিত্র গুলোকে আপনার পরিচিত কারো সাথে সম্পর্কিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার জন্য তা স্মরণ রাখা সহজ হবে।
৬। একই সাথে একাধিক কাজ এড়িয়ে চলুন ; বর্তমানে আমাদের অনেকেই একই সাথে একাধিক কাজ করে থাকি এবং অানন্দিত হই। কিন্তু যদি তার মধ্যে নতুন কিছু শেখার থাকে ?! তাহলে তা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হবে না। যারা একই সাথে একাধিক কাজে অভ্যস্ত, তারা নতুন কিছু সহজে স্মরণ রাখতে পারে না। একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে , একই সাথে একাধিক কাজ আমাদের সামর্থ্যকে দুর্বল করে দেয়, বিশেষ করে কিছুটা জটিল ও অপরিচিত কাজের ক্ষেত্রে।
৭। আপনি যা শিখেছেন তা অন্যদের শিখান ; লোমা লিন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, নতুন অর্জিত কোন শিক্ষা যদি অন্যকে শিখানো হয় ,তবে তা ব্যক্তির নিজের স্মৃতিতেই আরো মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।কোনো কিছু অন্যকে বুঝানোর সময় তা নিজের ভাষায় বলা হয় এবং তা মস্তিষ্কে সহজেই সংরক্ষিত হয়ে যায়।