Down Syndrome নামটির সাথে আমরা খুব একটা পরিচিত নই। তবে আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছেন যারা ডাউন সিন্ড্রমে আক্রান্ত। এটি হচ্ছে একটি genetic disorder বা জ্বিনগত অস্বাভাবিকতা, যা কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মানুসারে প্রাণীদেহে প্রতিটি কোষের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট ক্রোমোসোম সংখ্যা। মানবদেহের প্রতিটি কোষে ২৩ জোড়া বা ৪৬ টি ক্রোমোজোম থাকে। কখনো কখনো দেখা যেতে পারে এ নিয়মের ব্যাতিক্রম, ২১ তম জোড়াতে দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা। যার ফলে ২১ তম ক্রোমোজমের অবস্থানে ২ টির পরিবর্তে দেখা যায় ৩ টি ক্রোমোজম এবং মোট ক্রোমোজম সংখ্যা দাড়ায় ৪৭ টি। ২১ তম অবস্থানে ২ টির পরিবর্তে ৩ টি ক্রোমোজমের এ ব্যাপারটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় Trisomy।

ডাউন সিন্ড্রম বাহকরা প্রধাণত ২ ধরনের লক্ষন বহন করেন, যার কতগুলো শারীরিক এবং কতগুলো আচরণগত। শারীরিক লক্ষনগুলো প্রকাশ্য হওয়ায় এ লক্ষনগুলো জানা থাকলে আমাদের চারপাশে এরকম কেউ থাকলে আমরা সহজেই তাকে শনাক্ত করতে পারবো। ডাউন সিন্ড্রমের বাহকরা যে শারীরিক লক্ষন গুলো বহন করেন- দুর্বল মাংসপেশী, ছোট ঘাড়, মুখমন্ডল ও নাক চ্যাপ্টা প্রকৃতির ও ছোট, কান ও মাথাও তুলনামূলকে ছোট। এছাড়াও তাদের চোখগুলো উর্ধ্বমুখী এবং তির্যক প্রকৃতির, চোখের রঙিন অংশে সাদা দাগ থাকে এবং আঙ্গুলগুলো আকারে সংক্ষিপ্ত হয়। আচরণগত লক্ষণগুলোর মাঝে রয়েছে মনোযোগ স্বল্পতা, বিচারিক অদক্ষতা, আবেগপূর্ণ আচরণ, ধীরে ধীরে শেখা এবং ভাষার বিলম্বিত বিকাশ।

ডাউন সিন্ড্রম বাহক শিশুদের মাঝে অনেক সুপ্ত প্রতিভাও দেখা যায়। এদের মাঝে অনেকেই মৌখিক অভিব্যক্তি, অঙ্গভঙ্গি এবং ইশারার মাধ্যমে খুব চমতকারভাবে নিজের মনোভাবগুলো প্রকাশ করতে পারে। অনেকের স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর হয়ে থাকে যাকে ফটোগ্রাফিক মেমোরির সাথে তুলনা করা হয়।

যেহেতু মানবদেহের ক্রোমোজোমগুলো মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই প্রতিলিপিত হয়ে বিন্যস্ত হয়ে যায় তাই ডাউনসিন্ড্রমের শুরুটাও হয় মাতৃগর্ভ থেকেই। গবেষকগণ এ রোগের কারণ সম্বন্ধে এখনো একমত হতে পারেন নি। তবে অনেক গবেষকের মতে, ৩৫ বছর বা তার অধিক বয়সে মা গর্ভধারণ করলে সন্তানের ক্রোমোজমে এই অস্বাভাবিকতা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ক্রোমোজোমগত অসাম্যটি বাবা বা মা যে কারো থেকেই আসতে পারে।

ডাউন সিন্ড্রম কোন রোগ নয়। এটি জন্মগত বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে প্রতি ৮০০ জনে ১ জন এ বৈশিষ্ট্যের ধারক। আন্তর্জাতিক গবেষণার তথ্যানুসারে বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ডাউন সিন্ড্রমে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লক্ষেরও অধিক। সরাসরি কোন প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক না থাকলেও নিয়ন্ত্রিত জীবন, থেরাপি এবং বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবন যাপনে নিয়ে আসা যায়৷ language & speech therapy এর মাধ্যমে তাদের ভাষাগত দক্ষতা, বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার জন্য রয়েছে Vocational therapy এবং শারীরিক অন্যান্য সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরণের physical therapy। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে সম্পূর্ণ না হলেও অনেকাংশে তাদের জীবনের ছন্দপতন হ্রাস করা সম্ভব। একটা ব্যাপার অবশ্যই আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, ডাউন সিন্ড্রম যাদের মাঝে রয়েছে তারা আমাদের বোঝা নয়, তারা কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ধারক মাত্র। তাদের সে বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিকমতো কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিলে তারাও আমাদের সমাজে অন্যান্যদের মতোই অবদান রাখতে পারবে। তারাও আমাদের সম্পদ।

Psycure

Scroll to Top