ঘুমের সমস্যা মানুষের মধ্যে খুবই কমন একটি সমস্যা। অধিকাংশ মানসিক সমস্যাগুলোর সাথে সাধারণত ঘুমের সমস্যা থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ এবং ঘুমানোর মত উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার ফলেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ঘুমের সমস্যা শুধুমাত্র মানসিক কারনেই নয় এগুলোর পাশাপাশি শারীরিক সমস্যার কারনেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই
* চিন্তা করুন ঘুমের সমস্যা একটা খারাপ অভ্যাস যেটিকে ঠিক করা যাবে, এবং এই অভ্যাসের পরিবর্তন হয়ে একটি ভালো অভ্যাসে পরিনত না হওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলো আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে।
*ধীরে ধীরে ঘুমের ঔষধ খাওয়া কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন, তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনি আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
* আপনার ঘুমের একটি শিডিউল তৈরি করুন, আপনি প্রতিদিন গড়ে কতক্ষণ ঘুমান, আপনি সকালে কখন ঘুম থেকে উঠেন, রাতে কখন ঘুমাতে যান, এগুলোর একটি বিস্তারিত এক সপ্তাহের শিডিউল তৈরি করুন। শুরুতে হয়তো শিডিউল অনুসরন করা একটু কষ্টকর হবে। এজন্য আপনি প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫ মিনিট করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এবং এভাবে এক সময় আপনি পুরোপুরি শিডিউল এর সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন।
ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে:
1 .শেষ বিকালে অথবা সকাল বেলা হালকা ব্যায়াম করুন। ঘুমানোর সময়ের পূর্বে একটু বিশ্রাম নিন। ঘুম নিয়ে চিন্তা করুন, এবং কিভাবে ঘুমাবেন তার জন্য পরিকল্পনা করুন।
2 .সন্ধ্যার সময়ে নিজের মধ্যের সকল প্রকার উত্তেজনাগুলোকে প্রশমিত করুন। ঘুমাতে যাওয়ার ৯০ মিনিটের মধ্যে মানসিক চাপমুলক অথবা চ্যালেঞ্জিং কোন কাজ করবেন না, এবং এই অনুযায়ী একটি রুটিন করুন।
3 .আরাম কেদারায় বসে ঘুমাবেন না অথবা ন্যাপ (হালকা ঘুম) নিবেন না। ঘুমটাকে শুধুমাত্র শুতে যাওয়ার সময়ের জন্য রেখে দিন।
4. অতিরিক্ত মাত্রায় কফি অথবা চা পান করবে না; রাতে হালকা কিছু খাবার খেতে পারেন এবং চকলেট অথবা ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
5 .ভালো ঘুম হওয়ার জন্য অ্যলকোহল বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। এর পাশাপাশি ধুমপান থেকে বিরত থাকুন।
6 .আপনার বিছানা এবং শোয়ার ঘর আপনার জন্য আরামদায়ক কিনা সেটি নিশ্চিত করুন, খুব বেশি ঠান্ডা, উষ্ণ, কোলাহল পূর্ণ অথবা উজ্জ্বল যেন না হয়। রুমের মধ্যে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং অ্যালার্ম ঘড়ি দেওয়ালের দিকে ঘোরানো থাকবে।
7 .রাতে ঘুম ভাঙলে তার জন্য প্রস্তুতি নিন, যেমন, ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখুন এবং হালকা গরম দুধ বা দুধজাত কোন তরল খাবার ফ্লাক্সে তৈরি করে রাখুন।
শুতে যাওয়া সময়:
8. যতক্ষন পর্যন্ত আপনার ঘুমাতে যাওয়ার সময় না হয় এবং যতক্ষন পর্যন্ত আপনার ঘুম না আসে এবং আপনি ক্লান্ত অনুভব করেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনি আপনার বিছানা থেকে দুরে থাকুন,- ক্লন্তি আপনাকে খুবই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে এবং সারারাত আপনাকে একটি প্রশান্তির ঘুম উপহার দিবে।
9. বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব লাইট বন্ধ করে দিন। বিছানায় বসে পড়াশুনা করা, টিভি দেখা, ফোনে কথা বলা, শুয়ে শুয়ে মোবাইল চালানো, খাওয়া, ড্রিংক করা এগুলো করা যাবে না। মনে রাখবেন, শোবার ঘর শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্য।
10. রিলাক্সজেশন এর ব্যায়ামগুলোকে আপনি অনুশীলন করতে পারেন, এক্ষত্রে আপনার কোন ঘটনা বা গল্প চিত্রকে অনুসরণ করার মাধ্যমে করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি আপনি রাতে ব্যবহার করার পূর্বে দিনের বেলা বেশ ভালোভাবে অনুশীলন করে নিতে পারেন।
11. ঘুমানোর চেষ্টা করা পরিত্যাগ করুন, ঘুম এমনি এমনি আসবে, আপনার চোখ খোলা রাখুন এবং বেশ শান্তভাবে ঘুমকে প্রতিরোধ করুন (এক্ষত্রে আপনি মনে মনের কল্পনা করতে পারেন যে আমি ঘুমাবো না আমি ঘুমাবো না) অথবা জেগে থাকাটাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিন। নিজেকে মনে করিয়ে দিন ঘুম স্বাভাবিক ভাবেই আসবে।
12. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে জাগার জন্য একটি অ্যালার্ম সেট করতে পারেন এভাবে সপ্তাহে সাত দিন অনুশীলন করুন, এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি প্রতিদিন এই একই সময়ে ঘুম থেকে জাগছেন।
যদি আপনি ঘুমাতে না পারেন অথবা যদি জেগে যান:
13. আপনি যদি লাইট বন্ধ করার বা শোয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘুমাতে না পারেন অথবা রাতে ঘুমের মধ্যে জেগে যান এবং তারাতারি যদি ঘুম না আসে, তাহলে উঠে পড়ুন, এবং শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে যান।
14. যখন বিছানা ছেড়ে বাইরে চলে যাবেন তখন কিছু সময়ের জন্য রিলাক্স করার মত কিছু একটা করতে পারেন (যেটি আগেভাগেই আপনি পরিকল্পনা করে রাখবেন) এবং আগামীকাল কি করবেন তা নিয়ে চিন্তা করবেন না।
15. নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন যে ঘুমের সমস্যা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় এবং আপনি এটিকে যেভাবে চিন্তা করছেন এটি সেভাবে আপনার কোন ক্ষতি করবে না। মন খারাপ করা, হতাশ হওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার অনধিকার প্রবেশকারি চিন্তাগুলোকে উদ্বেগগুলোকে একটি নোট খাতায় লিখে বিছানার পাশে রেখে দিন এবং এগুলোকে নিয়ে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পরে ডিল করুন।
16. আপনার যখন পুনরায় ঘুম ঘুম ভাব আসবে ক্লান্ত অনুভব করবেন তখন বিছানার ফিরে যান। বাতি বন্ধ করে দিন এবং রিলাক্স করুন।
এর পাশাপাশি ঘুমের সমস্যার জন্য কোন সাইকোলজিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করুন এবং নিয়মিত সাইকোথেরাপি নিন। নিয়মিত সাইকোথেরাপি নিলে ঘুমের সমস্যা অনেকাংশে ভালো হয়ে যায়।
মনে রাখবেন, “আমাদের ঘুম কেন হচ্ছে না? তাই নিয়ে চিন্তা করি বলেই কিন্তু আমাদের ঘুম হয় না।”
রেফারেন্সঃ Colin A. Espie (2010). Overcoming Insomnia and Sleep Problems. A self-help guide using Cognitive Behavior Therapy.