কার্ল রজারসঃ মনোবিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাত ধরে মনোবিজ্ঞানের জগতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন দিগন্ত তিনি তাদেরমধ্যে অন্যতম। মনঃচিকিৎসক দের হাতিয়ার সাইকোথেরাপি তে তিনি উন্মোচন করেছেন এক নতুন দিগন্তের। নন ডিরেক্টিভ সাইকোথেরাপি বা ক্লায়েন্ট সেন্টার থেরাপি এর জনক কার্ল রজারস। পরবর্তীতে এই থেরাপীর নাম দেয়া হয় পারসন সেন্টার থেরাপি। কার্ল রজারস মনে করতেন, ব্যাক্তিত্ব এর উপর প্রেজেন্ট ইমোশন, ও ফিলিংস এর রয়েছে চরম প্রভাব। ব্যাক্তির নিজের স্বার্থকে কার্যকর করা এবং তাকে ফুল ফাংশনিক পারসন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে পারসন সেন্টার থেরাপির মূল উদ্দেশ্য।

বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের ওক পার্ক, ইলিনয় তে এক ধার্মিক পরিবারে ১৯০২ সালে কার্ল রজারস জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান। ছোট বেলা থেকেই তিনি ধর্মীয় দীক্ষায় দীক্ষিত হোন। তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতেন স্বপ্নিল,লাজুক ও একাকী হিসেবে। পরিবারের বাইরে তিনি খুব কম মানুষের সাথে মেলামেশা করতেন। তার নন ডিরেক্টিভ থেরাপির চিন্তার সুত্রপাত ঘটে তার ছোট বেলায় পরিবার থেকে পাওয়া ধর্মীয় দীক্ষা হতে।১৯২৪ সালে তিন তার বাল্যবন্ধুর সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হোন।

তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের মত তিনিও উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এগ্রিকালচার এর উপর আন্ডারগ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেন ১৯২৪ সালে। এর পরে তিনি নিউ ইয়র্কের ইউনিয়ন থিওলজিক্যাল সেমিনারি তে ভর্তি হোন। ১৯৩১ সালে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি তার পি এইচ ডি ডিগ্রি গ্রহনের সময় চাইল্ড স্টাডি নিয়ে কাজ করেন ১৯৩০ সালে। ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি রোচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষকতা করেন, ১৯৪০ সালে তিনি ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন ১৯৫৭ পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। এসময় তিনি সেখানে কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন ও এর উন্নয়ন এর জন্য কাজ করেন।

এর পরে তিনি ১৯৫৭ সালে তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয় এ যোগদান করেন এবং ১৯৬৩ পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। এসময় তিনি পারসোনালিটি থিওরি নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও লিখালিখি করেন এবং সেগুলো বৈজ্ঞানিক মহলে প্রচুর জনপ্রিয়তা পায় একি সময়ে তিনি ওয়েস্টার্ন বিহেভিওরাল সায়েন্স ইন্সটিটিউট এর একজন সদস্য হোন এবং ১৯৬৮ সালে তিনি এই সংগঠন থেকে বের হয়ে নতুন একটি সংগঠন সেন্টার ফর স্টাডিজ অফ দ্য পারসন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনিত হোন। তিনি তার কর্মজীবনে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেন এর মধ্যে সায়েন্টিফিক কন্ট্রিবিউশন এ্যাওয়ার্ড টু সাইকোলজি, কন্ট্রিবিউশন এ্যাওয়ার্ড টু এপ্লাইড সাইকোলজি, হিউম্যানিস্ট অফ দ্য ইয়ার এ্যাওয়ার্ড অন্যতম।

তত্ত্ব : তার তত্ত্ব এর প্রধান দিক হলো self বা নিজ। কিভাবে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে নিজেকে এবং বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় সেটা তার তত্ত্বের মূল দিক। তার মতে self concept খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন একটি শিশুর সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে স্বীকৃতি, ভালবাসা ও অনুমোদন খুবই প্রয়োজনীয়। সেটি নিজের কাছে ও এবং অন্যদের কাছেও পেতে হবে, তাহলে সে পুরোপুরিভাবে কার্যকরী মানুষ হতে পারবে। রর্জাস এইটিকে positive regard বলেছেন।Empathy বা সহমর্মিতা তার তত্ত্ব এর অন্যতম প্রধান দিক একটি।

 বিখ্যাত কিছু উক্তি : ” The curious paradox is that when I accept myself just as I am,then I can change ” ” The good life is a process,not a state of being. It is a direction not a destination. ” ” The only person who is educated is the one who has learned how to learn & change. ”

জনপ্রিয় বই সমূহ : কার্ল রর্জাস সাইকোথেরাপি,সাইকো এনালাইসিস, সাইকিয়াট্রি র উপর অনেক বই লিখেছেন। তার কিছু জনপ্রিয় বই – ১)On becoming a Person : A therapist’s view of psychotherapy. ২)Person to person : The problem of being human৩)A way of being. ৪) Freedom to learn ৫)On personal Power ৬) Encounter groups ৭)significant aspects of client-centered therapy ৮) Active listening Etc

মৃত্যু : প্রয়োগবাদমূলক বা মনুষ্য -সংক্রান্ত পথের জনক কার্ল রর্জাস ১৯৮৭ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি হৃদরোগ এ আক্রান্ত হয়ে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।

Psycure

Scroll to Top