এখনকার বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার নিয়ে আগের চাইতে অনেক বেশি সচেতন। ফলশ্রুতিতে, নার্সারি কিংবা ক্লাস ওয়ানে পড়াকালীন সময়ে নির্ধারণ হয়ে যায় ছেলেটি বা মেয়েটি বড় হয়ে কি করবে? সে ডাক্তার হবে নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবে, তা বাবা-মা ঠিক করে। মোটকথা, ক্লাস ওয়ানেই তার ভাগ্য ফিক্সড। এর বাইরে আর কিছুই চিন্তা করা যাবে না।
সে ছেলেটিকে বা মেয়েটিকে অমানবিক নির্যাতন করে ক্লাসে নিয়মিত ফার্স্ট বানানো হয়। ফার্স্ট হওয়ার জন্য তাকে দুই-তিনটা প্রাইভেট পড়তে হয়, হোমওয়ার্ক করতে হয়, গাদা গাদা শীটপএ মুখস্থ করতে হয় ইত্যাদি। এতকিছু করতে গিয়ে তার নিজের জন্য সময় থাকে না। সে একটু খেলাধুলা করার সময় পায় না, প্রকৃতির কাছে যাওয়ার সময় পায় না, মানুষের সাথে মিশতে শিখে না এবং প্রকারান্তে, সে একটি রোবটের মতো হয়ে বড় হতে থাকে। এই রোবটগুলো কখনো বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে আবার কখনো পারে না। ধরে নিলাম, সবাই বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলো কিন্তু আল্টিমেটলি লাভটা কি হলো?
দেশে কি শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার লাগে? অন্য পেশার মানুষ কি দরকার হয় না? তার চাইতেও বড় কথা যে ছেলে বা মেয়েটি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হলো, ও কি তাই হতো, যদি নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতো? হয়তো নিতো না।
আমরা তো সবাই জানি, প্রতিটি মানুষ ইউনিক। সবার প্যাশন আলাদা, ভালো লাগা আলাদা। তাই একেক মানুষের পেশা হবে একেক রকম। কেউ গায়ক হবে, কেউ নায়ক হবে, কেউ চিত্রশিল্পী হবে, কেউ শিল্পপতি হবে, কেউ উদ্যোক্তা হবে। তাহলে সবাই কেনো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছি? সবাই যদি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হই তাহলে অন্য পেশায় যাবে কে?
সবপেশাতেই বেস্ট হওয়া যায়। সম্মান পাওয়া যায়। টাকাও কামানো যায়। যদি প্যাশন আর প্রফেশন মিলে যায়।
আমাকে দিয়ে কি হবে? আমার প্যাশন কী? আমার কী কী ভালো লাগে? এগুলো না ভেবেই যদি বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকি তাহলে আমার ইউনিকনেস কাজে লাগবে কীভাবে? ক্রিয়েটিভ মানুষ হবো কীভাবে?
অন্যের কথায় আপনাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে না, ডাক্তার হতে হবে না, ইঞ্জিনিয়ারও হতে হবে না। বরং আপনি ঐটাই হোন যেটা আপনার ভালো লাগে, যে কাজে আপনি মজা পান। ভাই শুনেন, টাকার চিন্তা করবেন না। শুধু চিন্তা করুন, কিভাবে আপনার প্যাসনের পেশায় আপনি বেস্ট সার্ভিস দিতে পারবেন। তাহলে টাকা একদিন আপনার পিছু ছুটবে।
আপনি আজকে কী চান, ১ মাস পর কী চান, এক বছর পর কী চান, সেটা চিন্তা করা বন্ধ করুন। চিন্তা করুন ১০/২০ বছর পর আপনি কী চান।
অনেক টাকা উপার্জন করা মানেই সাকসেস নয়। বরং আপনি যা চান তা অর্জন করতে পারাটাই সাকসেস বা সফলতা। প্যাশনকে অবজ্ঞা করে যদি শুধু টাকার পিছনে ছুটেন, জীবনেও শান্তি পাবেন না। বড় কিছু করাও আপনাকে দিয়ে হবে না। বরং হতাশ এবং এভারেজ একজন মানুষ হয়ে আপনাকে সমাজে বেঁচে থাকতে হবে। আবারও বাবা-মায়ের চাওয়ার কাছে একটু ফিরে যাই। তারা কী চায়, তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি কী চান। জীবনটা আপনার, পেশাটাও আপনার হবে। তাই নিজের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে শিখুন, নিজের সম্পর্কে জানুন।
আর যদি অন্যের সিদ্ধান্ত মেনে নিন তাহলে সারাজীবন পস্তাবেন। এখন একটি মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, আমি যা হতে চাই আমি তো ঐ বিষয়ে পড়ছি না। তাহলে কী করবো? আরে ভাই শুনেন- ডাক্তারি পড়ে কোম্পানির সিইও, উদ্যোক্তা হওয়ার অনেক গল্প আছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ক্রিকেটার হওয়ার গল্পও আছে। এবার নিজের গল্পটা তৈরি করুন।
শুধু আপনাকে নিজেকে জানতে হবে, নিজের মতো হতে চাইতে হবে। তাহলেই আপনার ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম সবকিছুকে হার মানিয়ে দিবে।